প্রিয় পরীক্ষার্থী, তোমরা ২০২৫ সালের এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নেবে। তোমাদের পরীক্ষা জুন মাসের ২৬ তারিখ থেকে শুরু হবে। এখন থেকে তুমি সময় পাবে মাত্র দুই মাস। মনে রেখো, সিলেবাসটি বড়, তাই এখন থেকেই তোমাকে রিভিশন দিয়ে সঠিক প্রস্তুতি নিতে হবে। তোমরা কীভাবে ভালো ফলাফল করবে, তা নিয়ে দেওয়া হলো ১০টি পরামর্শ।
১. আগে পরিকল্পনা ঠিক করো-
পরীক্ষায় প্রস্তুতি ভালো করে নেওয়ার জন্য প্রয়োজন পড়ার একটা ‘সঠিক পরিকল্পনা’ করা। আর সেই পরিকল্পনাটি কেমন হবে, তোমাকেই তা ঠিক করে নিতে হবে। তোমাকেই ধীরে ধীরে সঠিক প্রস্তুতির পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করে নিতে হবে।
২. বোর্ড তৈরি করে নাও-
‘পড়া ও পরীক্ষা’বিষয়ক প্রয়োজনীয় সবকিছু চোখের সামনে থাকা চাই। আর তা তোমার পড়ার টেবিলের সামনের বোর্ডে লাগিয়ে রাখতে হবে। যেমন তোমার তৈরি করা পড়ার রুটিন, এইচএসসি পরীক্ষার রুটিন, পদার্থ, রসায়ন, জীববিজ্ঞান ও গণিতের সূত্রগুলো, ভূগোলের মানচিত্র, ছবি, গ্রাফ, খুঁটিনাটি সমস্যার সমাধান, প্রয়োজনীয় তথ্য ইত্যাদি। বোর্ডে সব দরকারি তথ্যগুলো তোমার চোখের সামনে থাকলে খুব সহজেই চোখে পড়বে, আর তা আয়ত্তে এসে যাবে।
৩. তৈরি করো পড়ার রুটিন-
একজন ছাত্রের প্রতিদিনের পড়ার ‘একটা রুটিন’ থাকতে হবে। তুমি বিজ্ঞান, মানবিক বা ব্যবসায় শিক্ষা—যে বিভাগেই পড়ো না কেন, তুমি নিজেই একটা রুটিন তৈরি করে নেবে। কোন বিষয়টা আগে পড়বে, কোনটা পরে পড়বে, কোন বিষয়টা কত সময় ধরে পড়বে—তোমার প্রয়োজনমতো তা ঠিক করে নাও।
৪. সাইড নোট জরুরি-
প্রতিদিন পড়ার সময় তুমি বিভিন্ন বিষয়ে যে যে সমস্যার মুখোমুখি হবে, তা তখনই নোট খাতায় লিখে রাখবে। পরে সেই সমস্যাগুলো কলেজশিক্ষক বা গৃহশিক্ষক বা বড়দের সহায়তা নিয়ে সমাধান করে নিতে পারবে। এতে তোমার প্রস্তুতিটা অনেক সহজ হয়ে যাবে।
৫. প্রতিদিনের অনুশীলন-
গণিত, পদার্থ, রসায়ন, অর্থনীতিসহ অনেক বিষয়ে গাণিতিক সমস্যা আছে। এই গাণিতিক সমস্যার ভয় দূর করতে হবে তোমাকেই। আর তা দূর করার একমাত্র উপায় হলো অনুশীলন, অনুশীলন আর অনুশীলন। তাই প্রতিদিন গণিত অনুশীলন করলে দেখবে তা ধীরে ধীরে সহজ হয়ে গেছে। পড়ার রুটিনে অবশ্যই প্রতিদিন একবার হলেও এসব বিষয় অনুশীলনের জন্য সময় নির্ধারণ করে নেবে।
৬. তোমার হাতের লেখা-
তোমার হাতের লেখা কেমন? তুমি নিজেই তা জানো। যদি ভালো হয়, তাহলে তো চমৎকার। আর যদি মোটামুটি বা খারাপ হয়, তবে আজ থেকেই হাতের লেখা ভালো করার চেষ্টা করো। হাতের লেখা ভালো করার জন্য অর্থ লেখা সুন্দর, লেখা পরিষ্কার, কাটাকাটি না করা, লেখার অক্ষর একই সমান হওয়া। সে জন্য আজ থেকেই দাগটানা খাতায় লেখার অভ্যাস করতে পারো।
৭. বাছাই করো কঠিন বিষয়গুলো-
তুমি যে বিভাগেরই পরীক্ষার্থী হও না কেন, কোনো কোনো বিষয় কারও না কারও কাছে একটু কঠিন লাগে। এই কঠিন লাগার বিষয় নিয়ে কী করবে? ওই সব বিষয় কী পড়বে? নাকি বাদ দিয়ে রাখবে। বাদ রাখা যাবে না। নাকি চেষ্টা করে সমস্যা থেকে বের হবে? আমার মতে, চেষ্টা করে এই সমস্যার সমাধান করা উচিত।
৮. প্রতিদিনের পড়া শেষ করা-
প্রতিদিনের পড়া তুমি যদি প্রতিদিন শেষ করো বা করার চেষ্টা করো, দেখবে পরীক্ষার আগে তোমার কোনো পড়া জমা নেই। সব বিষয়ের সব পড়া একসঙ্গে তোমার আয়ত্তে এসে গেছে। পরীক্ষার আগে তোমার তেমন বেগ পেতে হচ্ছে না। পরীক্ষা নিয়ে কোনো সমস্যা হবে না।
৯. পড়ো এবং লেখো-
প্রতিটি বিষয়ই মনোযোগসহকারে পড়বে। পড়ার পর কোনো কোনো প্রশ্ন লিখবে। প্রয়োজনে কোনো কোনো প্রশ্নের উত্তর নিজে নিজে লিখবে। এতে তোমার হাতের লেখা চালু থাকবে। আর সমস্যাও ধরা পড়বে। তা সহজেই পরে সংশোধন করে নিতে পারবে।
১০. রিভিশন দাও-
এখন তোমার প্রতিটি বিষয়ের প্রস্তুতি গ্রহণ শেষ। তাই নতুন করে কোনো প্রশ্নের উত্তর পড়বে না। এত দিন তুমি যা পড়েছো, তাই মনোযোগ দিয়ে রিভিশন দাও। এতে ছোট ছোট সমস্যা সামনে আছে, তা সহজেই দূর করে নিতে পারবে। এতেই কিন্তু এইচএসসি পরীক্ষায় তোমার সফলতা আসবে।
*লেখক: এম এ কালাম, অধ্যক্ষ, গুলশান কমার্স কলেজ, ঢাকা