ঢাকা শহরে এখন অগণিত অটোরিকশা রয়েছে। কেউ কেউ বলছেন, সংখ্যাটি প্রায় ১২ লাখ। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ধীরগতির শহর ঢাকার আরও ধীর হওয়ার অন্যতম কারণ এই রিকশা। এর মাঝে বর্তমান সরকার অটোরিকশা নিয়ে যে ধরনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তা আত্মঘাতী।
এম শামসুল হক বলেন, “ঢাকায় ইজি বাইক, অটোরিকশা পঙ্গপালের মতো প্রতিদিন বাড়ছে, এর মাঝে এটিকে রেগুলারাইজের কথা বলা হচ্ছে। ঢাকার রাস্তায় রিকশা, ফুটপাত, বাস নিয়ে নানা সমস্যা তো আছেই। এর মাঝে এটাকে (রিকশা) বৈধতা দিয়ে সরকার দ্বিতীয় সমস্যা তৈরি করছে। একবারও তারা বিজ্ঞানভিত্তিকভাবে দেখছেন না।”
তিনি জানান, ঢাকায় সাড়ে সাত শতাংশ রাস্তা আছে, যার গুণগত মান ঠিক নেই। অর্থাৎ, মানুষ কিংবা যানবাহন, কারোরই চলার মতো অবস্থা নেই ঢাকায়।
পরিবহন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক শামসুল হক আরও বলেন, এরকম অবস্থায় “একমাত্র সমাধান হতে পারে গণপরিবহন। অথচ আমরা বাসরুট ফ্রেঞ্চাইজ করতে পারি নাই। এই ছোট ছোট গাড়িগুলো আসায় বাসের চলারও জায়গা নাই। যারা যারা (রিকশাকে) রেগুলারাইজ করার জন্য সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন, এটি সুইসাইডাল অ্যাটেম্পট হবে।”=
রিকশা নিয়ন্ত্রণ, ফুটপাত দখলমুক্ত, বাসরুট ফ্রেঞ্চাইজ করতে না পারার “দায়” সরকারকে নিতে হবে জানিয়ে তিনি বলেন, “আপনারা তো কোনও জিনিসই পারেন নাই।”
তার মতে, এই সমস্যা সমাধানের জন্য রিকশার উন্নত মানের সংস্করণ এনে চালকদেরকে প্রশিক্ষণ দেওয়ার এই আয়োজন সম্পূর্ণ অর্থহীন। কারণ এখানে চলার জায়গাই নেই।
বিশ্বের যেসব শহরে রাস্তা কম, তারা রাস্তার “প্রোডাক্টিভিটি বাড়ানোর জন্য বাসকে মেরুদণ্ড বানিয়েছে এবং বাসের পথকে পরিষ্কার করেছে, যাতে দ্রুত গতিতে চলতে পারে। বিশ্বের সব দেশ ছোট গাড়িকে নিরুৎসাহিত করছে। কিন্তু বাংলাদেশে ঘটছে উল্টোটা।”
বাংলাদেশে দুই দশক আগেও রিকশা নিয়ে বিতর্ক হয়েছে। তখন রিকশাকে লাইসেন্স দিয়েছে, চালকদের প্রশিক্ষণ দিয়েছে। কিন্তু বাস্তবে নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনি। বর্তমান সরকার অতীতের দিকে না তাকিয়ে “অপেশাদারি সিদ্ধান্ত” নিচ্ছে বলে মত তার।
বিশ্বের সব দেশ ছোট ছোট গাড়ি দিয়ে পরিবহন চাহিদা মেটানোর মতো সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসে “কম গাড়ি, কম চালক, ইজিলি ম্যানেজমেন্টের দিকে যাচ্ছে” জানিয়ে তিনি বলেন, “সরকার এটি করছে, যাতে বাসরুট ফ্রাঞ্চাইজি নিয়ে কোনও কথা না বলতে হয়।”
“সংখ্যাগত, বিচরণগত নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে কিছুই যখন পারেন নাই, তখন আপনাদের নৈতিক অধিকার নাই, ঢাকাকে আরও ডুবানোর। যারা এই কাজগুলো করছেন, তারা ঢাকা বসবাসযোগ্য নগরীর তলানি থেকে ওঠার সম্ভাবনাকে নষ্ট করে দিচ্ছেন” বলে মত তার।
“দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্যি যে এটি সংস্কারের সরকার। অথচ তারাও ট্র্যাডিশনালি এই কাজগুলো করে গণপরিবহন ও ছোট গাড়ির ব্যাপারে যেভাবে ডিসিশন নিচ্ছে, তাতে আজীবন সমালোচনার মাঝে থাকবে এই সরকার” বলেও মন্তব্য করেন তিনি।