বোরো ফসলের অফুরন্ত ভান্ডার হিসেবে পরিচিত কিশোরগঞ্জ জেলা। একসময় এই জেলার হাওরাঞ্চলে বোরো ধান কাটার মৌসুমে স্থানীয় ও দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে লাখো কৃষি শ্রমিকের আগমন ঘটতো। কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ধান কাটার মৌসুমেও শ্রমিক সংকট ক্রমেই প্রকট হচ্ছে।
বৈশাখের প্রখর রোদ ও ঝড়-বৃষ্টির মধ্যে কষ্ট করেও ন্যায্য মজুরি না পাওয়ায় অনেক শ্রমিকই এখন আর এই পেশায় থাকতে আগ্রহ দেখাচ্ছেন না। পেশা বদল করে কেউ প্রবাসে পাড়ি জমাচ্ছেন, কেউ কেউ গার্মেন্টস ও নির্মাণ শ্রমিকসহ বিভিন্ন পেশায় যুক্ত হচ্ছেন। এছাড়াও কৃষিতে যান্ত্রিকীকরণের প্রভাবে কমছে কৃষি শ্রমিক। আগে বোরো ধান কাটার মৌসুমে কিশোরগঞ্জ জেলায় লাখো শ্রমিক কাজ করলেও চলতি মৌসুমে ৪৫ হাজার শ্রমিক কাজ করছেন।
মিঠামইন হাওরের কৃষক মারুফ মিয়া জানান, আগের মতো আর সহজে শ্রমিক পাওয়া যায় না। দিনে দিনে কমে যাচ্ছে ধান কাটার শ্রমিকের সংখ্যা। বৈশাখের প্রখর রোদ ও ঝড়-বৃষ্টির মধ্যে হাওরে ধান কাটা অনেক কষ্টের কাজ। তাই অনেক শ্রমিক তাদের পেশা বদল করছেন।
কটিয়াদী উপজেলার করগাঁও এলাকার কৃষক আশরাফুল ইসলাম জানান, আগে বোরো ধান কাটার সময় প্রতিদিনই ভোরে করগাঁও স্কুল মাঠে কৃষি শ্রমিকের হাট বসতো। এই হাটে স্থানীয় ও দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে হাজার হাজার শ্রমিকের আগমন ঘটতো। এখন এই কৃষি শ্রমিকের হাট আর বসে না। দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে কৃষি শ্রমিকও আসে না।
নিকলী হাওরের কৃষক মকবুল হোসেন বলেন, কৃষিশ্রমিক কমে যাওয়ার মূল কারণ কৃষিতে যান্ত্রিকীকরণের প্রভাব। শ্রমিক দিয়ে ১ একর জমির ধান কাটতে সময় লাগতো ৫-৬ ঘণ্টা, আর এই জমির ধান মেশিন দিয়ে কাটতে সময় লাগে ১ ঘণ্টা। এছাড়াও কৃষিকাজ খুব কষ্টের কাজ, এটাও একটা কারণ।
নিকলী হাওরের ধান কাটতে নেত্রকোনা জেলার দুর্গাপুর উপজেলা থেকে ১৬ জনের একটি দল নিয়ে এসেছেন ষাটোর্ধ্ব রুহুল আমিন।