People Voice
আন্তর্জাতিক

ভারত-পাকিস্তান সংঘাতে বাংলাদেশে কী প্রতিক্রিয়া

ভারত-পাকিস্তান সংঘাত ও উত্তেজনাকর পরিস্থিতিতে উদ্বেগ প্রকাশ করে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার।

দুই দেশকে মূলত সংযত হয়ে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ সৃষ্টির আহ্বান জানানো হয়েছে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে। আজ বুধবার বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে উদ্বেগ প্রকাশের পাশাপাশি এ আহ্বান জানানো হয়।

এদিকে, অন্তর্বর্তী সরকারের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান  বলেন, “বাংলাদেশ মনে করে কূটনৈতিক দিক থেকে আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করা উচিত।

ভারত – পাকিস্তান উত্তেজনা নিরসন করে শান্তিপূর্ণ ও স্থিতিশীল অবস্থানে ফিরে আসবে বলে বাংলাদেশআশা করে। “ভারত-পাকিস্তানের সংঘাতে এই অঞ্চলের অর্থনীতি ও বাণিজ্য খাতে নানা প্রভাব পড়ার আশঙ্কাও রয়েছে।

আন্তর্জাতিক সম্পর্কের বিশ্লেষকরা বলছেন, ভারত – পাকিস্তানের চলমান অবস্থা আপাতত দুই দেশের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলেও তা পরোক্ষভাবে ভৌগোলিক স্থিতিশীলতাকে প্রভাবিত করবে। ফলে সেই প্রেক্ষাপটে উদ্বেগের অবকাশ রয়েছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক নিলয় রঞ্জন বিশ্বাস  বলেন, ” এই কনফ্লিক্টটা এই অঞ্চলের সকল দেশকেই খুব স্বাভাবিকভাবে অনেক বেশি উদ্বিগ্ন করে।”

“কারণ এটাএখন দুই দেশের মধ্যে সীমাবদ্ধআছে। কিন্তু ভৌগোলিক এক ধরনের স্থিতিশীলতা ব্যাহত হলে বাকি দেশগুলোর ক্ষেত্রে পরোক্ষ বহু ধরনের প্রভাবের সম্ভাবনা থাকে” বলেন নিলয় বিশ্বাস।

ভারত শাসিত কাশ্মীরের পহেলগামে গত ২২শে এপ্রিল সন্ত্রাসী হামলায় ২৬ জন নিহত হয়। শুরু থেকেই ভারত এ হামলার জন্য পাকিস্তানকে দায়ী করে।

পরে গত ২৪ শে এপ্রিল প্রথমে ভারত এবং পরে পাকিস্তান একে অপরের বিরুদ্ধেআকাশসীমা বন্ধ করাসহ পাল্টাপাল্টি এক গুচ্ছ কড়া পদক্ষেপ নেয়।

সে পরিস্থিতিতে গত ২৭শে এপ্রিল বাংলাদেশের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন বলেছিলেন, ভারত – পাকিস্তানের চলমান পরিস্থিতি বাংলাদেশের ওপর প্রভাব ফেলবে না।

ভারত – পাকিস্তানের চলমান পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের অবস্থান খুব স্পষ্ট বলেও উল্লেখ করেছিলেন তিনি। যে কোন উপায়ে দুই দেশের উত্তেজনা যাতে প্রশমিত হয়, সেটি বাংলাদেশের কামনা বলে জানিয়েছিলেন মি. হোসেন।

কিন্তু এখন দুই দেশ সংঘাতে জড়িয়েছে। এমন প্রেক্ষাপটে আজ বুধবার (সাতই এপ্রিল) অন্তর্বর্তী সরকার এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ভারত ও পাকিস্তানের চলমান পরিস্থিতি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে বাংলাদেশ। সেখানকার পরিস্থিতি নিয়ে বাংলাদেশ গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।

“উভয় দেশকে বাংলাদেশ অনুরোধ করেছে যেন তারা শান্ত থাকে, ধৈর্য প্রদর্শন করে এবং পরিস্থিতির আরো অবনতি হতে পারে, এমন পদক্ষেপ নেয়া থেকে বিরত থাকে” বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে।

”বাংলাদেশ আশা করছে, আঞ্চলিক শান্তি, উন্নতি এবং স্থিতিশীলতার জন্য কূটনৈতিকভাবে এই উত্তেজনার অবসান হবে” বলেআশা প্রকাশ করেছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

সরকারের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান বিবিসি বাংলাকে বলেন, “ভারত, পাকিস্তানের এই সংঘাতে বাংলাদেশে তেমন কোনো প্রভাব পড়বে না। এরপরও বংলাদেশের পণ্য আমদানি-রপ্তানিতে ভারতের আকাশপথে কোনো সমস্যা হয় কি না, সেটা পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।”

সাবেক কূটনীতিক এম হুমায়ুন কবির বন্ধুপ্রতীম দেশ হিসেবে বাংলাদেশের বক্তব্যকে সঠিক বলে মনে করছেন।

” সরকার যেটা বলেছে যে, তারা উদ্বিগ্ন ও দুই দেশ এ পথ থেকে সরে এসে শান্তিপূর্ণ সমাধানে এগোক, বাংলাদেশ সরকারের এই অবস্থান সঠিক বলে আমি মনে করি” বলেন মি. কবির।

যুদ্ধ কখনোই ভালো কিছু বয়ে আনে না উল্লেখ করে মি. কবির বলেন, ” এতে জানমালের ক্ষতি হয়। কাজেই এক্ষেত্রে আমরা পক্ষ নেওয়ার চাইতে বিষয়টির প্রতি বেশী মনোযোগী থাকা উচিত। যাতে জানমালের ক্ষতি হয়, এমন কোন কাজ যাতে না ঘটে -সেটাকে আহ্বান জানানোই প্রধান কাজ বলে মনে হয়।”

বাংলাদেশের এখনকার কৌশল যথার্থই বলে মনে করেন সাবেক এই কূটনীতিক।

পাঁচই অগাস্ট আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর অধ্যাপক ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেয়।গণ অভ্যুত্থানের মুখে ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতে চলে যাওয়ায় দিল্লির সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কে টান পড়তে শুরু করে।

আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক নিলয় রঞ্জন বিশ্বাস বলছেন, ভারতের সাথে বাংলাদেশের সম্পর্কে নির্দিষ্ট মাত্রা রয়েছে। পাকিস্তানের সাথে এখন যে সম্পর্ক তৈরি হচ্ছিল-এ সংঘাত দীর্ঘায়িত হলে তা ব্যাহত হবে।

Related posts

ফের আন্তর্জাতিক ফ্লাইটের নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ বাড়াল ভারত

fz@admin

ট্রেনের যাত্রীদের জিম্মি: ২০ সেনা নিহত

News Desk

আমনা বালুচের সঙ্গে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সাক্ষাৎ, ঢাকায় এসে খুশি পাকিস্তানের পররাষ্ট্র সচিব

News Desk