People Voice
পরিবেশ ও জলবায়ু

‘বায়ুদূষণে’ বাড়ছে বজ্রপাত

বাংলাদেশে বজ্রপাতের ঘটনা বৃদ্ধির সঙ্গে বায়ুদূষণের সম্পর্ক নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে, নির্দিষ্ট কিছু বায়ুদূষণকারী উপাদান—বিশেষ করে ধুলিকণা (ডাস্ট) ও সালফেট (SO₄)—বজ্রপাতের হার বৃদ্ধির সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত।

গবেষণায় ২০১৫ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত ছয় বছরের বজ্রপাতের তথ্য বিশ্লেষণ করেছেন গবেষকরা। ওই তথ্য অনুসারে দেশে বজ্রপাতের ‘শীর্ষ শিখর’ হলো এপ্রিল থেকে মে মাস পর্যন্ত সময়কাল। অর্থাৎ এই সময়কালে বজ্রপাতের ঘটনা সবচেয়ে বেশি ঘটে। এর ‘দ্বিতীয় শিখর’ হলো আগস্ট থেকে সেপ্টেম্বর। আর ডিসেম্বর-জানুয়ারিতে সবচেয়ে কম বজ্রপাত ঘটে।

‘রোল অব পলিউট্যান্টস অন দ্য বাইমোডাল লাইটনিং ডিস্ট্রিবিউশন ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক ওই গবেষণায় উল্লেখ করা হয়েছে, এপ্রিল থেকে মে মাসে ভারত ও পাকিস্তানের দিক থেকে প্রবাহিত শক্তিশালী পশ্চিমা বাতাস বাংলাদেশে প্রচুর পরিমাণে ধুলিকণা ও সালফেট নিয়ে আসে। এই উপাদানগুলো মেঘের গঠনে প্রভাব ফেলে এবং বজ্রপাতের সম্ভাবনা বাড়িয়ে তোলে। অন্যদিকে শীতকালে বায়ুমণ্ডলে অতিক্ষুদ্র বস্তুকণা অর্থাৎ পিএম ২.৫ এর ঘনত্ব বৃদ্ধি পায়; যা সূর্যালোক বাধাগ্রস্ত করে। এতে বজ্রপাতের সম্ভাবনা কমে আসে।

গত ১৮ এপ্রিল এ গবেষণাকর্মটি স্প্রিঞ্জার ইন্টারন্যাশনাল পাবলিশিং কর্তৃক ‘আর্থ সিস্টেমস অ্যান্ড এরভায়রনমেন্ট’ নামের খ্যাতনামা একটি বিজ্ঞান সাময়িকীতে (জার্নাল) প্রকাশিত হয়েছে। জার্নালটি পৃথিবীব্যবস্থা, বিজ্ঞান ও পরিবেশ সম্পর্কিত বিষয়ে সমসাময়িক গবেষণা প্রকাশ করে থাকে।

বজ্রপাত সংক্রান্ত উল্লিখিত গবেষণার জন্য ছয় বছরে বাংলাদেশে ৮০ লাখের বেশি বজ্রপাতের ঘটনা রেকর্ড করা হয়েছে। এর মধ্যে ২০১৬ সালের ৫ এপ্রিল একদিনেই ৮ লাখের বেশি বজ্রপাতের ঘটনা ঘটে।

এপ্রিল-মে মাসে বজ্রপাতের প্রধান শিখরে ধুলিকণার ঘনত্ব ৮৮% এবং সালফেটের ঘনত্ব ৫১% পর্যন্ত বৃদ্ধি পায়, যা আগস্ট-সেপ্টেম্বরের তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি। এই তথ্য এমন ধারণা দেয় যে, ধুলিকণা ও সালফেট বজ্রপাতের ঋতুভিত্তিক বৈচিত্র্যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

এতে বলা হয়েছে, সুনামগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ ও হবিগঞ্জসহ দেশের উত্তর ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলের জেলাগুলোতে বজ্রপাতজনিত মৃত্যুর হার সবচেয়ে বেশি।

এপ্রিল-মে মাসে বজ্রপাতের প্রধান শিখরে ধুলিকণার ঘনত্ব ৮৮% এবং সালফেটের ঘনত্ব ৫১% পর্যন্ত বৃদ্ধি পায়, যা আগস্ট-সেপ্টেম্বরের তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি। এই তথ্য এমন ধারণা দেয় যে, ধুলিকণা ও সালফেট বজ্রপাতের ঋতুভিত্তিক বৈচিত্র্যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

গবেষণার এই ফলাফল বজ্রপাতের পূর্বাভাস ও ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে বলে মনে করছেন গবেষকরা।

এই গবেষণাকর্মে নেতৃত্ব দিয়েছেন অস্ট্রেলিয়ার কার্টিন ইউনিভার্সিটির স্কুল অব আর্থ অ্যান্ড প্ল্যানেটারি সায়েন্সেস ডিসিপ্লিনের অধ্যাপক আশরাফ দেওয়ান।  তিনি বলেন, ‘আমরা স্পষ্টভাবে দেখতে পাচ্ছি যে, বায়ুমণ্ডলে দূষণ বৃদ্ধির ফলে বাংলাদেশে বিশেষ করে প্রাক-বর্ষা মৌসুমে বজ্রপাতের ঘটনা বাড়ছে। এক্ষেত্রে আমাদের দক্ষিণ এশিয়ার উত্তর-পশ্চিম অঞ্চলে জৈবজ্বালানি পোড়ানো নিয়ন্ত্রণে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে শক্তিশালী আলোচনার প্রয়োজন।’

এই গবেষণাকর্মের সঙ্গে যুক্ত অন্যরা হলেন—বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের এ টি এম এস আজম, নাসরিন আক্তার ও এম রাফিউদ্দিন এবং যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব ওকলাহোমার মোহাম্মদ আল-মাসুম মোল্লা।

Related posts

ইতিহাসের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা বৃদ্ধি

News Desk

কমেছে সড়ক বেড়েছে মামলা, কমেনি দুর্ঘটনা

fz@admin

বজ্রপাত থেকে বাঁচতে করণীয়

News Desk