People Voice
অপরাধ

পারভেজ হত্যায় অংশ নেয় ছাত্র ও কিশোর গ্যাং সদস্য

বেসরকারি প্রাইমএশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের টেক্সটাইল বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র জাহিদুল ইসলাম পারভেজকে তাঁর ক্যাম্পাসের সামনেই নৃশংসভাবে কুপিয়ে, পিটিয়ে হত্যা করা হয়। এই হত্যাকাণ্ডে অংশ নেয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র, অছাত্র, কিশোর গ্যাংয়ের সদস্য। তাদের মধ্যে ১১ জনকে শনাক্ত করেছে পুলিশ। এরই মধ্যে তিনজনকে গ্রেপ্তারও করা হয়েছে এবং তাদের সাত দিনের রিমান্ডের আদেশ দিয়েছেন আদালত।

সোমবার দুপুরে বনানীর ১৭ নম্বর সড়কে অবস্থিত প্রাইমএশিয়া বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় সরেজমিনে দেখা গেছে, ক্যাম্পাসের পরিবেশ থমথমে। এর আগে গত শনিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের ফটকে খুন হন পারভেজ। তাই আজ সোমবারও শিক্ষার্থী, বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ সবার মুখে পারভেজ হত্যাকাণ্ডের আলোচনা।

কেউ কেউ ঘটনার সময় অনেকের নির্লিপ্ততা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন। সৈকত নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, ঘটনার সময় প্রধান ফটকে চারজন নিরাপত্তাকর্মী, আট-দশজন শিক্ষার্থী ছিলেন। তাঁরা কেউই পারভেজ ও তাঁর বন্ধুকে বাঁচাতে এগিয়ে আসেননি। উল্টো সবাই যে যাঁর মতো বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরে নিরাপদে আশ্রয় নেন। একপর্যায়ে পারভেজ হামলাকারীদের ধাক্কা দিয়ে প্রধান ফটকের ভেতরে প্রবেশ করলে নিরাপত্তাকর্মীরা শাটার নামিয়ে দেন। তখনো হামলাকারীদের কেউ ধাওয়া দেননি। হামলার পর হামলাকারীরা নিরাপদে সেখান থেকে চলে যায়।

ঘটনাস্থলে থাকা বিশ্ববিদ্যালয়টির চার নিরাপত্তাকর্মীর তিনজন হলেন মাহামুদুল, সোয়েব ও মনির। অপরজনের নাম জানা যায়নি। তিনজনই ফটকের ভেতরের দিকে ছিলেন। তবে হত্যাকাণ্ডের পর ওই নিরাপত্তাকর্মীদের কথা বলতে নিষেধ করেছে কর্তৃপক্ষ।

অনেক অনুরোধের পর এক নিরাপত্তাকর্মী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, হামলাকারীরা প্রথমে পারভেজের সঙ্গে সড়কে ঝগড়া করে, কথা-কাটাকাটি হয়। এরপর ঘটে হামলার ঘটনা। হামলা এত দ্রুত ঘটে শেষ হয়েছে যে, কোনো কিছু বুঝে ওঠার আগেই হামলাকারীরা চলে যায়।

তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে এভাবে হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় শিক্ষার্থীরা ক্ষুব্ধ। পারভেজকে কেউ বাঁচাতে এগিয়ে না আসায় অনেক শিক্ষার্থী নিজেদের সমালোচনা করেন।

পারভেজ ও তাঁর বন্ধু তরিকুলের ওপর যারা হামলা চালিয়েছে, তাদের মধ্যে বেশ কয়েকজন ছাত্র থাকলেও কয়েকজন কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যও ছিল। যারা বনানী, মহাখালী ও কড়াইল বস্তি এলাকায় মাদকসহ বিভিন্ন অপরাধের সঙ্গে জড়িত বলে জানিয়েছে পুলিশ। হত্যাকাণ্ড পরিকল্পনা ও হামলায় ১৫-২০ জন অংশ নিলেও এখন পর্যন্ত ১১ জনের নাম জানা গেছে। তাদের বিস্তারিত পরিচয় ও কর্মকাণ্ডের বিষয়ে অনুসন্ধান করেছে আজকের পত্রিকা।

এই ১১ জনের কারও কারও বিষয়ে মাদকসহ বিভিন্ন অভিযোগ পাওয়া গেছে। তারা মহাখালী, বনানী ও কড়াইল বস্তি এলাকায় ‘বেনসন গ্রুপ’ নামে একটি কিশোর গ্যাং গ্রুপের সদস্য বলে জানা গেছে। তারা ধাওয়া করে পারভেজ ও তাঁর বন্ধু তরিকুলের ওপর হামলা চালায়।

পারভেজ ও তরিকুল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে এলে সেখানেই মেহেরাজ ইসলাম, আবু জহর গিফফারি পিয়াস, মাহাথির হাসানসহ কয়েকজন ছুরি ও লাঠি দিয়ে এলোপাতাড়ি আঘাত করে। একপর্যায়ে আবু জহর গিফফারি পিয়াস ও মাহাথির হাসান পারভেজকে শক্ত করে ধরে রাখেন এবং মেহেরাজ ইসলাম ছুরিকাঘাত করেন। পারভেজের বন্ধু তরিকুল ইসলামকেও ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করেন। এতে তরিকুল তাঁর মাথায় ও বাঁ হাতের কনুইয়ে আঘাত পান। অপর দিকে পারভেজের বুকের বাঁ পাশে গভীর ছুরিকাঘাত করা হয়। দুজনকে উদ্ধার করে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক পারভেজকে মৃত ঘোষণা করেন।

Related posts

হত্যাচেষ্টা মামলার আসামী সুবর্ণা মুস্তাফা, অপু বিশ্বাসসহ ১৭ তারকা

News Desk

টাকা লুটে সাবেক সেনা ও পুলিশ সদস্যরা জড়িত : ডিএমপি

News Desk

কৌশলে গ্রাহকের টাকা আত্মসাত,কারাগারে সাইমুন রুবেল

News Desk