সংবিধান সংস্কারে বিএনপি জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের কাছে লিখিতভাবে যে প্রস্তাবগুলো দিয়েছিল, গতকাল কমিশনের সঙ্গে দীর্ঘ আলোচনায় নানা যুক্তি-ব্যাখ্যায় দলটি সে অবস্থানই প্রকাশ করেছে। অর্থাৎ সংবিধান ও রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি পরিবর্তনে কমিশনের করা সুপারিশগুলোতে বিএনপির জোরালো আপত্তি রয়েছে।
তবে দলটির দায়িত্বশীল নেতারা বলছেন, কিছু কিছু বিষয়ে কমিশনের যুক্তিসংগত সুপারিশ গ্রহণের জন্য বিবেচনা করছে বিএনপি। সে বিষয়গুলো দলের নীতি-নির্ধারণী পর্যায়ে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে বৈঠকে জানানো হয়েছে।
সংস্কার প্রশ্নে ঐকমত্য গঠনের লক্ষ্যে পাঁচটি কমিশনের গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশগুলো নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। এর অংশ হিসেবে গতকাল বৃহস্পতিবার দিনভর দেশের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপির সঙ্গে আলোচনা হয়। তবে আলোচনা শেষ হয়নি। আগামী রোববার আবারও আলোচনা হবে বলে ঐকমত্য কমিশন ও বিএনপির পক্ষ থেকে জানানো হয়।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, গতকাল সংবিধান সংস্কার কমিশনের কিছু প্রস্তাব (প্রজাতন্ত্র, রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি, মৌলিক অধিকার, আইন বিভাগ) নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
প্রথম দিনের আলোচনা শেষে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ সাংবাদিকদের বলেন, বিএনপি রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতির বিষয়ে পঞ্চদশ সংশোধনীর পূর্বের অবস্থায় ফিরে যেতে চায়। যেখানে ‘ধর্মনিরপেক্ষতা’ নেই। ‘আল্লাহর উপর আস্থা এবং বিশ্বাস’-এর কথা আছে। তাতে গণতন্ত্র, জাতীয়তাবাদসহ সবকিছু আছে রাষ্ট্র ও সংবিধানের মূলনীতি হিসেবে। বিএনপি বহুত্ববাদ ও ধর্মনিরপেক্ষতা নীতির পক্ষে নয়। বহুত্ববাদের বিরোধিতা করেছে বিএনপি।
বিএনপির এই নেতা আরও বলেন, সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচার যে কথাগুলো স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রে উল্লেখ আছে, সেসব বিষয় সংবিধানের প্রস্তাবনায় ও রাষ্ট্রীয় মূলনীতিতে অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব করেছে সংস্কার কমিশন। এ বিষয়ে বিএনপি দলীয়ভাবে আলোচনা করে পরে সিদ্ধান্ত জানাবে।
রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা শুরুর আগে সংবিধান, নির্বাচনব্যবস্থা, জনপ্রশাসন, দুর্নীতি দমন ও বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনের গুরুত্বপূর্ণ ১৬৬টি সুপারিশের বিষয়ে দলগুলোর কাছ থেকে লিখিত মতামত নিয়েছিল ঐকমত্য কমিশন। সেখানে যেসব বিষয়ে দলগুলো আংশিক একমত বা ভিন্নমত জানিয়েছিল, সেগুলো নিয়েই দলগুলোর সঙ্গে আলাদা আলোচনায় বসছে ঐকমত্য কমিশন। এরই ধারাবাহিকতায় গতকাল বিএনপির সঙ্গে আলোচনা শুরু করল কমিশন।
বিএনপির পক্ষে আলোচনায় অংশ নেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, সালাহউদ্দিন আহমদ, বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ইসমাঈল জবিউল্লাহ, আইনজীবী রুহুল কুদ্দুস কাজল ও সাবেক সচিব মনিরুজ্জামান খান। ঐকমত্য কমিশনের পক্ষে ছিলেন কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ, কমিশনের সদস্য বিচারপতি মো. এমদাদুল হক, বদিউল আলম মজুমদার, ইফতেখারুজ্জামান ও সফর রাজ হোসেন। প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী (ঐকমত্য) মনির হায়দার সঞ্চালক ছিলেন।
আলোচনার শুরুতে অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, বাংলাদেশে গণতন্ত্র কেবল বারবার হোঁচট খেয়েছে তাই নয়; একটি ব্যক্তিতান্ত্রিক স্বৈরতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। তাঁদের লক্ষ্য হচ্ছে একটি জাতীয় সনদ তৈরি করা। যাতে করে দেশে একটি স্থায়ী গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা যায়।