People Voice
চট্টগ্রামস্বাস্থ্য

ডায়রিয়া রোগী বাড়ছে চট্টগ্রাম বিভাগে

ব্রাহ্মণবাড়িয়া ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগ। ১০ মাস বয়সী সন্তান আকবর হোসেনকে কোলে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন লাকি আক্তার। এসেছেন নবীনগর উপজেলার গোবিন্দপুর গ্রাম থেকে। তিন-চারদিন ধরে পাতলা পায়খানা হচ্ছে শিশুটির, সঙ্গে জ্বর। প্রথমে স্থানীয় ফার্মেসিতে ছেলেকে নিয়ে যান। সেখানে স্যালাইন খেতে দেয়া হয়। উন্নতি না হওয়ায় নিয়ে আসেন হাসপাতালে।

দেশে গত কয়েক বছরে ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছর এপ্রিলের মাঝামাঝি পর্যন্ত দেশে মোট ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা সাড়ে ছয় লাখের বেশি। আক্রান্তের শীর্ষে চট্টগ্রাম বিভাগ, এর পরই ঢাকার অবস্থান। এ দুই বিভাগে ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা যথাক্রমে ১ লাখ ৪৮ হাজার ২৪৯ ও ১ লাখ ২৮ হাজার ১৬০। চট্টগ্রাম বিভাগের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ডায়রিয়া রোগী ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায়। চলতি বছর এখন পর্যন্ত (১৩ এপ্রিল) জেলাটিতে মোট রোগীর সংখ্যা ৩০ হাজার ৫৪৯ জন। এর মধ্যে ১২ হাজারের বেশি রোগী নবীনগর উপজেলার।

জেলার সিভিল সার্জন ডা. নোমান মিয়া বলেন, ‘ডায়রিয়ার মূল কারণ শুষ্ক আবহাওয়া। এ ধরনের আবহাওয়ায় নানা সংকট দেখা দেয়। চাপকলের পানির লেয়ার কমে যায়। বিশুদ্ধ পানির অভাবে মানুষ পুকুর, নদী, খাল-বিলের পানি ব্যবহার করে। বাসি খাবার খাওয়া, অপরিচ্ছন্ন থাকা ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের কারণেই ডায়রিয়ার প্রকোপ বাড়ে।’

দেশে ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীর একটি বড় অংশ শিশু। বিশেষজ্ঞদের মতে, শিশুদের ডায়রিয়া বেশি হওয়ার কারণ আবহাওয়ার পরিবর্তন। সাধারণত প্রাপ্তবয়স্করা এতে মানিয়ে নিতে পারলেও শিশুদের সমস্যা হয়। এ কারণে আক্রান্তের হার শিশুদের মধ্যে বেশি। এছাড়া সুপেয় পানি, স্বাস্থ্যসম্মত স্যানিটেশন ব্যবস্থা, স্বাস্থ্যসম্মত খাবার—সবকিছুর ওপর নির্ভর করে ডায়রিয়ার ঝুঁকি।

রাজধানীর লালকুঠি মা ও শিশু হাসপাতালের উপপরিচালক ডা. শাহনাজ খান  বলেন, ‘ডায়রিয়া প্রতিরোধে বেশি নজর দেয়া দরকার খাদ্যনিরাপত্তায়। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায়, খাদ্যে বিষক্রিয়ার কারণে শিশু ও প্রাপ্তবয়স্করা ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছে। এটি যেহেতু পানিবাহিত রোগ, তাই সুপেয় ও জীবাণুমুক্ত পানি পান করা জরুরি। পানি কী প্রক্রিয়ায় ফোটালে পুরোপুরি জীবাণুমুক্ত হবে সে ধারণা থাকতে হবে। ডায়রিয়া রোধে আরো বেশি জনসচেতনতা দরকার।’

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে দেয়া তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, গত দুই-তিন বছরে দেশে ডায়রিয়ার প্রকোপ আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে। দেশে ২০২৩ সালে ডায়রিয়ায় আক্রন্তের সংখ্যা ছিল ১৫ লাখ ১৪ হাজার ৮৩৪, ২০২৪ সালে যা ২২ লাখ ৪৭ হাজার ৩৪২ জনে পৌঁছায়। এর মধ্যে ২০২৩ সালে চট্টগ্রাম বিভাগে ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা ছিল ২ লাখ ৭৪ হাজার ৬৯৭। ২০২৪ সালে তা ৮০ দশমিক ৭৭ শতাংশ বেড়ে ৪ লাখ ৯৬ হাজার ৫৭৮ জনে পৌঁছায়।

২০২৪ ও ২০২৫ সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পরে চট্টগ্রাম বিভাগের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ডায়রিয়া রোগী চট্টগ্রাম জেলায়। ২০২৩ সালে এ জেলায় আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৬২ হাজার ৬০৩, ২০২৪ সালে যা বেড়ে দাঁড়ায় ৯৯ হাজার ৬৭২ জনে। চলতি বছরের এপ্রিলেও দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে চট্টগ্রাম। ১৩ এপ্রিল পর্যন্ত এ জেলায় রোগীর সংখ্যা ২৪ হাজার ৫০১।

চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্যমতে, চট্টগ্রাম মহানগরীর বাইরে ১৫টি উপজেলায় জানুয়ারিতে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছে প্রায় ৩ হাজার ৭৫০ জন। গড়ে প্রতিদিন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোয় ভর্তি হয়েছে ১২১ জন। ফেব্রুয়ারিতে আক্রান্ত হয়েছে ৩ হাজার ৪৩০ জন। গড়ে দিনে আক্রান্ত হয়েছে ১২৩ জন। মার্চে আক্রান্ত হয়েছে ৩ হাজার ৫০৩ জন। দিনে গড়ে আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ১১৩। ১৭ এপ্রিল পর্যন্ত চট্টগ্রাম জেলায় আক্রান্ত হয়েছে ২ হাজার ৪০০ জন। দিনে গড়ে আক্রান্তের সংখ্যা ১৪১।

চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন ডা. জাহাঙ্গীর আলম  বলেন, ‘চট্টগ্রাম জেলায় হঠাৎ ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। আমরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে আক্রান্তদের সর্বোচ্চ চিকিৎসা দিতে নির্দেশনা দিয়েছি। ডায়রিয়া প্রতিরোধে বিশুদ্ধ পানি পানের জন্য সাধারণ মানুষকে আহ্বান করছি। হাসপাতালগুলোয় পর্যাপ্ত স্যালাইন আছে। অনান্য ওষুধের সংকট নেই।

Related posts

কোভিড, নন-কোভিড দুই সেবাই চলবে মুগদা হাসপাতালে

fz@admin

চক্ষুবিজ্ঞান হাসপাতালে মারামারি-বিক্ষোভ, দিনভর স্বাস্থ্যসেবা বন্ধ

News Desk

চট্টগ্রামে থানায় বৈষম্যবিরোধী ও ছাত্রদল নেতাকর্মীর পাল্টাপাল্টি অবস্থান

News Desk