ময়মনসিংহের গফরগাঁও উপজেলার নিগুয়ারি ইউনিয়নে রাকিব হত্যা মামলায় চার আসামিকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। পরে তাদের আদালতে তোলা হয়। এসময় দশ দিনের রিমান্ড আবেদন করে পুলিশ। শুনানি শেষে আদালত তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। বাদী পক্ষের অভিযোগ আসামী পক্ষ থেকে মোটা অঙ্ক ঘুষ নিয়ে হত্যা মামলার আসামীদের জামাই আদরে রেখেছে পুলিশ।
গত ১ এপ্রিল গ্রেফতারকৃতদের বিরুদ্ধে মানববন্ধন করেন স্থানীয়রা ও বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের নেতারা। এসময় রাকিবের হত্যার বিচার দাবি করেন তারা।ময়মনসিংহের গফরগাঁও উপজেলা পাগলা থানার নিগুয়ারি ইউনিয়নে রাকিব হত্যার মামলায় ১৮ দিনেও মূলহোতাসহ অন্য আসামিদের গ্রেফতার না হওয়ায় বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী।
বাদি পক্ষের অভিযোগ, পলাতক আসামিরা বিভিন্ন নম্বর হুমকি, ধমকি দিচ্ছে। দ্রুত আসামীদের গ্রেপ্তার করার দাবি জানান তারা। পুলিশ বলছে, রাকিব (২৬) নামে এক যুবক গত ১৫ মার্চ বালু উত্তোলন নিয়ে সংঘর্ষে নিহত হয় পরে তার মরদেহ উদ্ধার করা হয় নিগুয়ারি ইউনিয়নের পল্টন মোড় থেকে। হত্যাকাণ্ডের পর, স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে ক্ষোভ তৈরি হয় এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দ্রুত তদন্ত শুরু করে পুলিশ।
পাগলা থানা পুলিশ রাজশাহী জেলা চাপাইনবয়াবগঞ্জ ঢাকা বাস স্ট্যান্ড এলাকা থেকে মিজু, জিয়া ও পারভেছ নামে তিনজন আসামিকে গ্রেফতার করা হয়। অন্য আসামীদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে বলে জানান পুলিশ। এদিকে, রাকিবের হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে মানববন্ধন করেন স্থানীয়রা। বলেন, “আমরা রাকিবের পরিবারকে ন্যায্য বিচার চাই। হত্যাকারীদের কঠোর শাস্তি প্রদান করতে হবে।” এ ঘটনায় পুলিশ তদন্ত অব্যাহত রেখেছে এবং আরও আসামি শনাক্তের চেষ্টা করছে।
যুবদল কর্মী মেহেদী হাসান রাকিব (২৮) খুনের নিহতের বাবা মজিবর রহমান বাদী হয়ে গেলো মঙ্গলবার রাতে পাগলা থানায় মামলাটি করেন। এতে জেলা যুবদলের সদস্য ইয়াছিন খানকে প্রধান আসামি করা হয়েছে। এ ছাড়া তার অনুসারী আরো ১০ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত পরিচয়ের সাতজনকে বিবাদী করা হয়েছে। খুনের ঘটনায় তিনজনকে গ্রেপ্তার করলেও মূলহোতাসহ অন্য আসামীরা এখনো ধরাছোঁয়ার বাহিরে। তবে থেমে নেই তাদের হুমকি। প্রতিনিয়ত মামলার বাদী মজিবুর রহমানসহ তার পরিবারকে বিভিন্ন মাধ্যমে একের পর এক হুমকি দিলেও নিবর ভূমিকা পালন করছে পাগলা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মুহাম্মদ ফেরদৌস আলম। অভিযোগ রয়েছে আসামীদের কাছে মোটা অঙ্কের লেনদেনের।
মামলার এজহারে উল্লেখ করা হয়, ফসলি জমির মাটি কেটে নেওয়াকে কেন্দ্র করে উপজেলার পাগলা থানার নিগুয়ারী ইউনিয়নের ত্রিমোহনী বাজারের পল্টন মোড়ে সোমবার রাতে মেহেদীকে পিটিয়ে ও ইট দিয়ে মাথা-মুখ থেতলে হত্যা করা হয়। ওই সময় সাবিদ নামে এক যুবক গুলিবিদ্ধ হন। নিহত মেহেদী তললী গ্রামের মজিবর রহমানের ছেলে। মামলার বিবরণে বলা হয়, মেহেদীকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়। এতে অংশ নেওয়া আসামিদের তাণ্ডবে মেহেদীকে বাঁচাতে এগিয়ে যেতে সাহস করেননি উপস্থিত লোকজন। ঘাতকদের মারধরে মেহেদী
অচেতন হয়ে পড়লে তাকে টেনেহিঁচড়ে স্থানীয় ফারুক মাওলানার দোকানের পেছনে নেওয়া হয়। এরপর মেহেদীর চোখ চেপে ধরে মিজু মিয়া, হাত ধরে রাখে নজরুল শেখ, ডান পা ধরে জাহিদুল, বাঁ পা হাতে রাখে তাইজুল, কোমর চেপে ধরে মন্তাজ ও বেলাল। প্রধান অভিযুক্ত ইয়াছিনসহ জিয়াউল, মোফাজ্জল ও পারভেজ ঘটনাস্থলের পাশে থাকা প্রায় ৩০ কেজি ওজনের একটি ভারী ইটের পাট্টা দিয়ে মেহেদীর মাথায় কয়েকবার সজোরে আঘাত করে। এতে মাথা থেতলে যায়, বেরিয়ে আসে খুলি, চূর্ণ-বিচূর্ণ হয় হাড়। অবয়ব পরিবর্তন হয়ে যায় মুখের।
নিহতের পরিবার ও স্থানীয়রা জানান, ময়মনসিংহ জেলা যুবদলের সদস্য ইয়াছিন খান ও তার বাহিনীর সঙ্গে ফসলি জমির মাটি কাটা নিয়ে বিরোধ চলছিল যুবদলকর্মী মেহেদীর। এ নিয়ে পল্টনমোড়ে কথাকাটাকাটির একপর্যায়ে তাকে যুবদল নেতা ইয়াছিনসহ তার অনুসারীরা হত্যা করে। হত্যাকাণ্ডে জড়িতরা পাগলা থানা বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক আক্তারুজ্জামান বাচ্চুর অনুসারী।
নিহত রাকিবের বাবা মজিবর রহমান ছেলে হত্যার বিচার চেয়ে আমার দেশকে বলেন, তার ফসলি জমি থেকে যুবদল নেতা ইয়াছিন, জিয়াসহ আরো কয়েকজন মাটি কেটে নিচ্ছিল। এ সময় তার ছেলে মেহেদী বাধা দেয়। এ নিয়ে ক্ষিপ্ত হয়ে সোমবার রাতে পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী তাকে ইয়াছিনসহ অন্য আসামিরা নির্মমভাবে হত্যা করে। এর আগেও এই বাহিনী নিগুয়ারী ইউনিয়নে অনেক মাছের খামার দখল ও মাছ লুট করেছে। এ হত্যাকাণ্ডে এলাকায় ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিন্দা ও প্রতিবাদের বঝড় উঠে।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে অভিযুক্ত ইয়াছিনের মোবাইল ফোনে কল দিলে তা বন্ধ পাওয়া যায়। এমনকি তার বাড়িতে গেলেও জানা যায়, ঘটনার পর থেকেই তার হদিস নেই। এ ব্যাপারে পাগলা থানার ওসি মুহাম্মদ ফেরদৌস আলম বলেন, আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলমান রয়েছে।